পূর্ব মেদিনীপুর: কাঁথি’র কিশোরনগর গড়ের রাজবাড়ির পুজো’য় (Durga puja at Kishornagar Rajbari) প্রায় সাড়ে ৩০০ বছরের ঐতিহ্য এখনও বিদ্যমান। এখানে কোন থিমের ঐতিহ্য না থাকলেও বহু দূর-দূরান্ত থেকে ভিড় জমায় মানুষজনেরা। এই পুজোয় দেখা যায় হিন্দু ও মুসলিম এর সম্প্রীতির ঐক্য। বিজয়া দশমীতে পীর সাহেবের প্রসাদ বিলি না করে, হয় না মায়ের বিসর্জন। পুরনো মন্দিরে স্থায়ীভাবে পূজিত হন স্বর্ণ দুর্গা।
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়েছে হারিয়েছে জৌলুস। তবে আজও একইরকম নিয়ম মেনে চলছে কাঁথির কিশোরনগর গড়ের রাজাযাদব রাম রায়ের দুর্গাপুজোর আয়োজন। এই রাজবাড়ির পুজোর আচার অনুষ্ঠান চমকে দেবে সকলকে। পুরনো নিয়ম ও ঐতিহ্য মেনেই এখন মা দুর্গার পুজো হয়। সপ্তমীর দিনে হোম এর আগুন জ্বালালো হয়, আতস কাঁচের মাধ্যমে সূর্যরশ্মি থেকে, যার আগুন নবমীর বিশেষ পুজো পর্যন্ত নেভানো হয় না। পুজোর সময় পূর্ব দিকে মায়ের মুখ থাকলেও পুজোর ঘট থাকে পশ্চিমমুখী। এখানে মায়ের নাম সংকীর্তন করে ধীবর সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা। এখানকার আখের মেলা জেলা জুড়ে বিখ্যাত। মায়ের বিশেষ প্রসাদ নিতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসে মানুষজন।
কাঁথি শহর তথা পূর্ব মেদিনীপুর জেলার ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন দুর্গো পুজো মানেই- কাঁথির কিশোরনগর গড় এর রাজবাড়ীর পুজো।
আরও পড়ুন: লন্ডনে বাঙালি চিকিৎসকদের দুর্গাপুজো যেন এক টুকরো কলকাতা আর বন্ধুত্বের ছায়া
প্রায় ৩৫০ বছর আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পুজোর প্রচলন করেন তৎকালীন রাজা যাদবরাম রায়। মা নিজেই মশাঁগা খাল পেরিয়ে, ধীবর নরোত্তম বর এর নৌকাতে এখানে আসেন। পারিশ্রমিক দিতে না পেরে ধীবর কে বলে- রাজা যাদব রাম রায়ের বাড়িতে চন্ডীমঙ্গল গান গাইতে, দিলে পারিশ্রমিক পাবে। সেইমতো পুজোর সময় ধীবর সম্প্রদায় গান গাইতে এলে সবাই তাদেরকে বাধা দেয়। তখন মায়ের নির্দেশ মতো ধীবর সম্প্রদায় মন্দিরের পেছনের দিকে চন্ডীমঙ্গল গাইতে শুরু করে, তখনই অলৌকিক ভাবে মন্দিরের (পেছনের) পশ্চিম দিকের দেওয়াল ফেটে যায় এবং পূজোর ঘট পূর্ব থেকে পশ্চিমমুখী হয়। সেই থেকে পুজোর ঘট পশ্চিম দিকে রেখে, মা এখানে পূজিত হন। আর মায়ের নির্দেশ অনুসারে ধীবর সম্প্রদায়ের মানুষজনেরা এখানে মায়ের নাম সংকীর্তন করেন। এই পুজোয় আগে মহিষ বলি’র প্রচলন থাকলেও বিশেষ কারণে তা এখন বন্ধ রয়েছে। তবে এখনো রয়েছে বলির কাঠ ও খর্গ ভক্তি ভরে পুজো করা হয়।
এই মেলায় গেলে দেখা যাবে পুরনো ঐতিহ্য বিদ্যমান রয়েছে, “কেল্লা-দৌড়ি” (দারোয়ান দের পাহারা দেওয়ার জায়গা) ও হাতি ঘোড়াশালের ভগ্নাংশ। স্থানীয় মানুষজনেরা এই মেলা ঘিরে খুবই আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠে। এই মেলা হয়ে ওঠে সম্প্রীতির মেলবন্ধন। স্থানীয় এক বাসিন্দা নন্দিশন নিয়োগী জানান- আগে বিসর্জনের সময় ক্যানেল পাড় শিব মন্দিরের কাছে উঠে আসতো জল। এই ধরনের একাধিক অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হিসেবে আজও বিদ্যমান কাঁথি’র কিশোরনগর গড় এর এই দুর্গোৎসব।
অন্য খবর দেখুন
